ইমেইল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে শুরু করবেন ?


ইমেইল মার্কেটিং কি ঃ ইমেইল মার্কেটিং কি এটা বুঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে মার্কেটিং কি ? সাধারন অর্থে মার্কেটিং বলতে আমরা বুঝি পণ্য বা সেবার প্রোমোশন এর জন্য আমরা যা করে থাকি । আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে মার্কেটিং করে থাকি । যেমন রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র , লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদি । ঠিক তেমনি ইমেইল মার্কেটিং এ ইমেইল হল একটা মিডিয়া বা মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা মার্কেটিং করে থাকি ।
তবে ইমেইল মার্কেটিং কি তা জানার সাথে সাথে আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে বেসিক ধারণা রাখতে হবে যেমন স্প্যাম, বাউন্স, ইমেইল সাবজেক্ট, ইমেইল টেম্পলেট, ইমেইল ক্যাম্পেইন ইত্যাদি । চলুন সংক্ষেপে জেনে আসি ।
স্প্যামঃ ইমেইল মার্কেটিং এর ভাষায় স্প্যাম হল অনাকাঙ্ক্ষিত ইমেইল যা ব্যাবহার কারীর অনুমতি ব্যতীত পাঠানো হয় যার উদ্দেশ্য হল বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচার । আমাদের ইমেইল এ স্প্যাম নামে ফোল্ডার টা আমরা সবাই দেখেছি কিন্তু ওইটা কখনও চেক করা হয় না কারন এখানে যে সকম মেইল আসে তা অনাকাঙ্ক্ষিত । সব ইমেইল সার্ভিস প্রভাইডার এর কিছু সলিড ফিল্টারিং রয়েছে যার মাধ্যমে তারা বুঝে যায় যে কোন ইমেইল ইনবক্স এ যাবে আর কোনটা স্প্যাম এ যাবে । ইমেইল স্প্যাম এ যাবার অনেক কারন আছে তার মধ্যে কয়েকটা হল ব্যাবহার কারীর অনুমতি না নেওয়া, সিঙ্গেল ইমেজ পাঠানো, টেক্সট ছাড়া শুধু অনেকগুলো ইমেজ পাঠানো, (টেক্সট ও ইমেজ এর অনুপাত ৩ঃ১ রাখা ), কিছু স্পামিং ওয়ার্ড যেমন ফ্রী, অফার ইত্যাদি ইমেইল কন্টেন্ট বা সাব্জেক্ট লাইনে এ ব্যাবহার করা, অতিরিক্ত সিম্বল এর ব্যাবহার করা,  ব্লক লিস্ট আইপি ব্যাবহার করে ইমেইল পাঠানো, ইমেইল এর সাইজ ৩০ কেবি এর বেশি হওয়া, এফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যাবহার করা ইত্যাদি কারনে ইমেইল স্প্যাম এ যেতে পারে ।
বাউন্সঃ ইমেইল বাউন্স মানে হল ইমেইল প্রত্যাখ্যাত হওয়া । ইমেইল বাউন্স নানা কারনে হতে পারে তার মধ্যে হল ইমেইল ইনভ্যালিড থাকলে, রিসিভার এর ইমেইল এর ব্ল্যাংক স্পেস যদি না থাকে, ইমেইল প্রভাইডার সার্ভার ডাউন হলে বা কোন স্প্যাম বা আপত্তিকর কোন কিছু ডিটেক্ট করলে । বাউন্স দুই প্রকার । ১. হার্ড বাউন্স ২. সফট বাউন্স । ইমেইল ইনভ্যালিড হলে হার্ড বাউন্স করার সম্ভাবনা বেশি তবে সফট বাউন্স  বাকি কারন গুলোর জন্য হয়ে থাকে ।
ইমেইল সাবজেক্টঃ আমরা আমাদের ইমেইল  এ যাবার পর টাইটেল হিসাবে যতটুকু দেখতে পাই তাই হল সাবজেক্ট লাইন । ইমেইল সাবজেক্ট পড়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেই ইমেইল টা ওপেন করব কি না । তাই ইমেইল সাবজেক্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তবে ইমেইল সাবজেক্ট ইমেইল এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ৫০ শব্দের মধ্যে রাখলে ওপেন রেট বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে ।
ইমেইল টেম্পলেটঃ ইমেইল টেম্পলেট হল আমাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত যে বিজ্ঞাপন আমরা ডিজাইন করে ইমেইল এ পাঠিয়ে থাকি । এটা আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথে লিঙ্ক করা থাকে এবং চাইলে ভিসিটর ইমেইল থেকে আমাদের সাইটে ভিসিট করতে পারে । কিছু ইমেইল টেম্পলেট দেখে আসতে পারেন এখান থেকে ।
ইমেইল ক্যাম্পেইনঃ ইমেইল ক্যাম্পেইন হল টোটাল ইমেইল সেন্ড করার প্রক্রিয়া । ক্যাম্পেইন এর মধ্যে রয়েছে লিস্ট তৈরি করা, সাবস্ক্রাইবার আপলোড করা, সাইন আপ ফর্ম ডিজাইন করা, সেগমেন্ট বা গ্রুপ করা, টেম্পলেট ডিজাইন করে নির্দিষ্ট কাস্ট মারদের মেইল এ সেটা পাঠানো ।
ইমেইল মার্কেটিং কেন করব ঃ পৃথিবীতে ৩৪% এর অধিক মানুষ ইমেইল ব্যবহার করে এবং ৯১% ব্যবহারকারী গড়ে একবার প্রতিদিন ইমেইল চেক করে । সে হিসাবে ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ইমেইল ব্যাবহার করে যা আগামী ২ বছরের মধ্যে ২.৮ বিলিয়ন এ পৌঁছাবে । যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে আমরা নিয়মিত ইমেইল চেক করি । তাই আমরা যদি ব্যাবহারকারীর  ইমেইল এ আমাদের পণ্য ও সেবার কোন অফার, কুপন কোড বা  বিজ্ঞাপন পাঠাই তাহলে আমাদের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তার ধারণা হবে এবং সে এর মাধ্যমে আমাদের ওয়েবসাইট ভিসিট করে অনলাইনে পণ্য ও সেবাটি নিতে পারবে । ইমেইল মার্কেটিং এর সুবিধাগুলো হল
  • এটা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনেক বেশি (৩০% এর ও অধিক ) কার্যকরী ।
  • অন্যান্য পদ্ধতিতে মার্কেটিং এর তুলনায় এটা অধিক সাশ্রয়ী । (ইমেইল মার্কেটিং এ প্রতি $১ ব্যয় এ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট $৪৪.২৫ )
  • এটা পরিমাপযোগ্য ও সহজে ব্যাবহার যোগ্য ।
  • মোবাইল ব্যাবহার কারী কাস্টমার দের কাছে ও সহজে পৌঁছানো যায় । (৭৫% এর ও অধিক ইমেইল ব্যাবহারকারী স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট এ মেইল চেক করে )
  • কল টু একশন এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট কে সরাসরি ওয়েবসাইট এ পাঠানো যায় ।
সারা পৃথিবীতে ইমেইল মার্কেটিং এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে । শুধু মাত্র আমেরিকাতেই অনলাইন মার্কেটিং এর ৪৪% ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে হয় থাকে এবং গড়ে ২০ % সেলস বৃদ্ধি করে ।
শুরুটা কিভাবে করবেনঃ ধরুন আপনি নতুন কোন বিজনেস স্টার্ট আপ করলেন । কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আপনার কাছে ইমেইল না থাকার ই কথা । এই অবস্থায় আপনি যদি ইমেইল মার্কেটিং শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে রিসার্চ এর মাধ্যমে (ব্ল্যাক হ্যাট মেথড) ইমেইল বের করে সেখানে আপনার পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন পাঠাতে পারেন । কিন্তু এই পদ্ধতিতে ইমেইল মার্কেটিং করলে তা আপনার বিজনেস এর জন্য ফলপ্রসূ কম বা নাও হতে পারে । একটা উদাহরণ দিচ্ছি বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য । ধরুন আপনি ভাইপার সুজ  নামে নতুন একটা জুতার বিজনেস শুরু করছেন । এই অবস্থায় আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা তা আপনি জানেন না । এখন আপনি রিসার্চ এর মাধ্যমে যে ইমেইল গুলো কালেক্ট করলেন তার অধিকাংশ ইমেইল ইনভ্যালিড হতে পারে । ইনভ্যালিড ইমেইল এ মেইল পাঠালে হার্ড বাউন্স করবে । তাছাড়া আপনি নিশ্চয় চাইবেন না অযথা নষ্ট ইমেইল এ মেইল পাঠাতে । কারন এটা সেন্ড করার পিছনে আপনার অবশ্যই একটা পরিমাণ ব্যয় থাকবে । তাই কিছু ইমেইল ভেরিফায়ার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে প্রথমেই ইন ভ্যালিড ইমেইল গুলো বাদ দিতে হবে । যেমন kickbox , bulkemailchecker খুবই ভাল ইমেইল চেকার । এবার ইন ভ্যালিড ইমেইল গুলো বাদ দেবার পরে যাদের কে আপনি ইমেইল পাঠাবেন তাদের মধ্যে হয়ত ৫০% এর আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আগ্রহ নাও থাকতে পারে । তবে আপনি চাইলে এখান থেকে ও আপনি আপনার টার্গেট কাস্ট মার দের খুজে বের করতে পারেন । ইমেইল মার্কেটিং টুলস গুলোর সাহায্যে সহজেই ট্র্যাকিং করার যায় কারা আপনার মেইল ওপেন করল, কত টাকার পণ্য বা সেবা নিল ইত্যাদি । ট্র্যাক করে দেখলেন যারা আপনার মেইল ওপেন করছে তাদের কে সেগমেন্ট করে অন্য একটা লিস্ট এ নিয়ে গেলেন ।  তবে চিন্তার কিছু নেই এখান থেকে যদি আপনার জন্য ২% ও সেলস এ কনভার্ট হয় সেটার এমাউন্ট টা ও হিউজ হতে পারে । ধরুন কেউ আপনার পণ্য বা সেবা নিল ই না তার পর ও তারা যদি এটা ইমেইল ওপেন করে তাহলেই আপনি সফল । সেলস আজ না হোক কাল হবে কিন্তু আপনি তাদেরকে যে আপনার পণ্য বা সেবার ধারণা দিয়েছেন এটাই অনেক । আপনার পণ্য বা সেবার ধারণা ক্রেতাদের মনে সৃষ্টি করাই আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ।
এবার আসি আমাদের টার্গেটেড বা কাঙ্ক্ষিত কাস্টমারদের ইমেইল কিভাবে পেতে পারি । এই পদ্ধতিকে হোয়াইট হ্যাট মেথড বলে । এই পদ্ধতিতে আপনি কাস্টমারদের অনুমতি নিয়ে ইমেইল কালেক্ট করবেন যাকে ডাবল অপটিন বলে । ডাবল অপটিন মানে হল আপনি সাইন আপ ফর্ম এর মাধ্যমে ইমেইল কালেক্ট করবেন যাতে আমার কাস্টমার গন স্বেচ্ছায় সাইন আপ করবে এবং সাইন আপ করার পরে তাদের ইমেইল ভ্যালিড কিনা তা যাচাই এর জন্য তাদের ইমেইল এ একটা কনফার্মেশন ইমেইল যাবে । তারা সাইন আপ করার পরে যদি কনফার্ম এ ক্লিক করে তবেই তাদের ইমেইল লিস্ট আপনার ডাটাবেজ এ যুক্ত হবে এবং আপনি এই পদ্ধতিতে আপনার বিজনেসের ১০০% টার্গেটেড ও ভ্যালিড কাস্টমারদের ইমেইল পাবেন ।
বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং টুলস গুলো তাদের সাইন আপ ফর্ম আপনার ওয়েবসাইট এ ইন্টেগ্রেট করার জন্য এমবেডেড কোড দেয় । আর আপনার সাইট যদি ওয়ার্ডপ্রেস এ করা থাকে তাহলে তো আরও সুবিধা । বিভিন্ন প্লাগিন এর মাধ্যমে আপনি নিজেই এটা ইন্টেগ্রেট করতে পারবেন । ওয়েবসাইট সাইন আপ ফর্ম ইন্টেগ্রেট করার সুবিধা হল আপনার সাইটের ভিসিটর হয়ত প্রতিদিন আপনার সাইট ভিসিট করে না । তাই সে যদি আপনার ওয়েবসাইট এর সাইন আপ ফর্ম এ সাইন আপ করে রাখে তাহলে পরবর্তীতে আপনার কোন অফার বা বিজ্ঞাপন যদি তার মেইল এ পাঠান তাহলে সে আপনার সাইট এ আবার ভিসিট করবে এবং তার কাঙ্ক্ষিত পণ্য বা সেবাটি নিতে পারবে । এভাবে আপনি আপনার রেগুলার কাস্ট মার দের সাথে এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে পারেন ।  তাছাড়া আপনি চাইলে আপনার সাইন আপ ফর্ম সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোট করে আপনার টার্গেটড কাস্টমারদের মেইল খুজে বের করতে পারেন । এভাবে ও আপনি আপনার টার্গেটেড কাস্টমারদের মেইল বের করে লিস্ট বিল্ডিং করে রাখতে পারেন এবং পরবর্তীতে আপনার পণ্য  বা সেবার বিজ্ঞাপন পাঠাতে পারেন ।

Comments