টপোলজি (Topology)

টপোলজি (Topology):

*  টপোলজি (Topology) মানে-সংযোগ ব্যাবস্থা।'

নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কীভাবে যুক্ত আছে সেই লেআউটকে বলা হয় টপোলজি

  • স্টার টপোলজি (Star Topology)
  • রিং টপোলজি (Ring Topology)
  • বাস টপোলজি (Bus Topology)
  • মেশ টপোলজি (Mesh Topology)

 


বাস টপোলজি


 বাস টপোলজিতে একটি মূল ক্যাবল সরাসরি চলে যায় এবং এর সাথে যুক্ত থাকে প্রতিটি কম্পিউটার।
  বাসের দু’প্রান্তে থাকে টার্মিনেটর যা ইলেকট্রিক সিগন্যালকে শুষে নেয়। চিত্র ১.১ - এ এরকম একটি বাস টপোলজি দেখানো হলো।


চিত্র ১.১ - বাস টপোলজি

 যে টপোলজিতে একটি মাত্র মাধ্যমের সাথে সব কয়েকটি ওয়ার্ক স্টেশন বা কম্পিউটার বা নোড সংযুক্ত থাকে তাকে বাস টপোলজি বলে। মাধ্যম বা সংযোগ লাইনকে সাধারণত বাস বলা হয়। বাস নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে অন্য কম্পিউটারের কাজ করতে কোন অসুবিধা হয়না। নেটওয়ার্কের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করতে এই টপোলজিতে সবচেয়ে কম ক্যাবল ব্যবহৃত হয়, ফলে এতে খরচেও সাশ্রয় হয়। নেটওয়ার্কের বাস সহজে সম্প্রসারণ করা যায় এবং এতে আরও অধিক সংখ্যক কম্পিউটারকে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।
এ নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের  সংখ্যা বেড়ে গেলে নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের অবনতি ঘটে। অবশ্য এ সমস্যা স্টার ও রিং টপোলজিতেও ঘটে।

বাস নেটওয়ার্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো টার্মিনেশন (termination)। বাস একটি প্যাসিভ টপোলজি হওয়ার কারণে এর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সিগন্যাল অবাধে যেতে পারে।

       যদি ক্যাবলের প্রান্তকে টার্মিনেট করা না হয় তাহলে দেখা যাবে সিগন্যাল একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে ধাক্কা খেয়ে আবার ফেরত আসছে। এভাবে ক্রমাগত ইলেকট্রিক সিগন্যাল যাতায়াত করতে থাকবে এবং এর পরের সিগন্যালের সাথে মিশে ভজঘট পাঁকাবে। প্রান্ত থেকে সিগন্যাল ফিরে আসাকে বলা হয় রিংগিং (ringing) এই রিংগিং যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ক্যাবলের প্রান্তে টার্মিনেটর নামের একটি রোধক ব্যবহার করা হয়। এই টার্মিনেটর ইলেকট্রিক সিগন্যাল কে নিঃশেষ করে দেয়, ফলে তা প্রতিফলিত হতে পারে না। প্রান্তে টার্মিনেটর ব্যবহার করা না হলে সমস্যা হবে। আপনার বাস টপোলজি নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিলে আগে দেখে নিন বাসের দু’প্রান্ত ঠিকমতো টার্মিনেট করা হয়েছে কি না
বাস টপোলজি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক হলো ১০ বেজ ২ (10Base2)।

স্টার টপোলজি (Star Topology):  
সবগুলো কম্পিউটার একটি কেন্দ্রীয় কানেক্টিং ডিভাইস থেকে সংযোগ দেওয়া হয়। 
কানেক্টিং ডিভাইস হিসেবে হাব অথবা সুইচ ব্যবহার করা হয় এবং হাব বা সুইচ এর মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ও ডেটা আদানপ্রদান করে।
স্টার টপোলজিতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ কিন্তু কানেক্টিং ডিভাইস হাব বা সুইচ খারাপ হয়ে গেলে সমস্ত নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়ে।। এ টপোলজিতে বেশী ক্যাবল ব্যবহৃত হয় বলে এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।

স্টার টপোলজিতে কোনো কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের নিকট মেসেজ পাঠাতে চাইলে সিগন্যাল পাঠায় সরাসরি হাব/সুইচের নিকট। হাব/সুইচ সেই সিগন্যালকে সব কম্পিউটারে কিংবা ওই গন্তব্য কম্পিউটারের নিকট পাঠায়। যদি সেই নেটওয়ার্ক হয়ে থাকে ব্রডকাস্ট-বেজড বা হাব-বেজড তাহলে হাব থেকে সিগন্যাল যাবে সবক'টি কম্পিউটারে। আর যদি সেটি সুইচড নেটওয়ার্ক হয় তাহলে সুইচ সেই সিগন্যালকে নির্দিষ্ট কম্পিউটারের নিকট পাঠিয়ে দেবে।
স্টার টপোলজিতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা যায়। কোন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করব তার উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের হাব/সুইচ দরকার হবে। কোনো কোনো হাব/সুইচ এ একইসাথে কোএক্সিয়াল ক্যাবল এবং ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল ব্যবহার করা যায়।

রিং টপোলজি (Ring Topology): 
রিং টপোলজিতে নেটওয়ার্কভুক্ত সবগুলো কম্পিউটারকে ক্যাবলের মাধ্যমে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যে একটি রিং বা লুপের সৃষ্টি হয়এই টপোলজিতে কোন শুরু বা শেষ প্রান্তসীমা থাকে না। রিং নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলো বৃত্তাকার পথে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার সংকেত পাঠালে তা পরবর্তী নোডের দিকে প্রবাহিত হয়। এভাবে তথ্যের একমুখী প্রবাহ পুরো বৃত্তাকার পথ ঘুরে আসে এবং বৃত্তাকার পথের বিভিন্ন নোডে সংযুক্ত কম্পিউটার প্রয়োজনে উক্ত সংকেত গ্রহণ করতে পারে। নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটি কম্পিউটার ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্যে সমান অধিকার পায়। নেটওয়ার্কে কোন সার্ভার কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়না। একটি মাত্র কম্পিউটারে ত্রুটি হলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে।

* উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য এ ধরনের টপোলজি ব্যবহার করা হয়।
* প্রতিটি কম্পিউটার সমান অধিকার পায়

মেস টপোলজি (Mesh Topology):

 মেস টপোলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের অধীনস্থ প্রত্যেকটি কম্পিউটার অন্য সব কম্পিউটারের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। 
তাই প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশন সরাসরি  যেকোনো ওয়ার্কস্টেশনের সাথে ডেটা আদানপ্রদান করতে পারে। এই টপোলজিতে নেটওয়ার্ক ইন্সটলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল। সংযোগ লাইনগুলোর দৈর্ঘ্য বেশী হওয়াই খরচ বেশী হয়।

* মেশ টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার প্রতিটির সাথে যুক্ত থাকে। এতে অনেক সংযোগ তৈরি করতে হয়। এখানে সংযোগের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বড় ধরনের নেটওয়ার্কে মেশ টপোলজি ম্যানেজ করা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই দেখা যায় বেশিরভাগ মেশ টপোলজিতেই সত্যিকার মেশ ব্যবহার না করে হাইব্রিড মেশ ব্যবহৃত হয়।

** মেশ টপোলজি ইনস্টল ও ম্যানেজ করা কঠিন। নেটওয়ার্ক ডিভাইস বাড়ার সাথে সাথে এটির সংখ্যা বাড়তে থাকে। যেমন একটি নেটওয়ার্কে যদি ৫ টি ডিভাইস থাকে এবং সেগুলিকে মেশ টপোলজির অধীনে আনতে চান তাহলে সংযোগ তৈরি করতে হবে ১৫ টি (৫+৪+৩+২+১)। তেমনি ডিভাইসের সংখ্যা ১০ টি হলে সংযোগের সংখ্যা হবে ৫৫ টি (১০+৯+৮+৭+৬+৫+৪+৩+২+১)। এভাবে ডিভাইস বাড়ার সাথে সাথে সংযোগও বাড়বে।
মেশ টপোলজির বড় সুবিধা হলো এটি ফল্ট টলারেন্ট অর্থাৎ এতে কোনো একটি সংযোগ অকেজো হলে নেটওয়ার্ক অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিটি ডিভাইস প্রতিটির সাথে সবসময় সংযোগ রক্ষা করতে পারবে এ টপোলজিতে। তবে অসুবিধা হলো এটি ম্যানেজ করা এবং রিকনফিগার করা। এটি ব্যয়বহুলও বটে।

 হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology): 

বিভিন্ন টপোলজি অর্থাৎ স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয় তাকে হাইব্রিড টপোলজি বলে।
      ইন্টারনেট একটি হাইব্রিড নেটওয়ার্ক, কেননা এতে প্রায় সব ধরণের নেটওয়ার্কই সংযুক্ত আছে। হাইব্রিড নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা নির্ভর করছে ঐ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত টপোলজিগুলোর উপর।


  

 বিভিন্ন লজিক্যাল টপোলজি


আমরা এতক্ষণে বিভিন্ন ফিজিক্যাল টপোলজি সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানব লজিক্যাল টপোলজি সম্পর্কে। ফিজিক্যাল টপোলজিতে জেনেছি কীভাবে একটি ডিভাইস আরেকটি ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে। এসব ডিভাইস কীভাবে ডাটা ট্রান্সমিট করে তা বুঝতে পারলেই পেয়ে যাবো লজিক্যাল টপোলজি। লজিক্যাল টপোলজি হতে পারে মাত্র দু'প্রকার - বাস এবং রিং।
কোনো নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলি বাসে যুক্ত থাকলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে এটি একটি বাস নেটওয়ার্ক এবং এখানে ডাটা পরিবাহিত হচ্ছে একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটিতে সিরিয়্যালি। এতে কোনো কম্পিউটার ডাটা পাঠাতে চাইলে সেটি সকল কম্পিউটারের কাছেই পৌঁছে। তেমনি ফিজিক্যাল রিং দেখে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি সেটিতে ডাটা প্রবাহিত হচ্ছে রিং টপোলজির নিয়মানুসারে। কিন্ত সমস্যা হয় যখন সেটি ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করে তখনই।
ফিজিক্যাল স্টার টপোলজিতে প্রতিটি ডিভাইস একটি সেন্ট্রাল ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড, হাব/সুইচ কিংবা মাউ (MAU) এবং লেয়ার ২- এ ব্যবহৃত লেয়ার ২ প্রটোকলসমূহের উপর নির্ভর করছে এর লজিক্যাল টপোলজি কী হবে।

লজিক্যাল বাস


বর্তমান ইথারনেট নেটওয়ার্কে আমরা সাধারণত ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করে থাকি। ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করা হলে সবকটি কম্পিউটার থেকে হাব/সুইচ এ সংযোগ দেয়া হয়। যেকোনো  ডিভাইস থেকে সিগন্যাল পরিবাহিত হতে হলে সেটি যায় হাব/সুইচ এর মধ্য দিয়েই। এই সিগন্যাল পরিবহনের জন্য হাব/সুইচ লজিক্যাল বাস টপোলজি ব্যবহার করে।
লজিক্যাল বাস টপোলজির সুবিধা হলো -
  • একটি কম্পিউটার বিকল হলে সেটি পুরো নেটওয়ার্ককে অকেজো করে দিতে পারে না।
  • এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লজিক্যাল টপোলজি।
  • অন্যান্য কম্পিউটারের কাজকে বিঘ্নিত না করে এধরনের টপোলজিতে সহজেই পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
লজিক্যাল বাস টপোলজির অসুবিধা হলো -
  • একইসময়ে কেবল একটিমাত্র ডিভাইস সিগন্যাল পাঠাতে পারে।
  • একসাথে একাধিক কম্পিউটার সিগন্যাল পাঠাতে চাইলে সেসব সিগন্যালের মাঝে কলিশন বা সংঘর্ষ হতে পারে।

লজিক্যাল রিং


কোনো ফিজিক্যাল টপোলজিতে ডাটা যদি রিং বা বলয়াকারে পরিবাহিত হয় তাহলে সেটিকে বলা হবে লজিক্যাল রিং টপোলজি। লজিক্যাল রিং টপোলজির বাস্তব উদারহরণ হলো টোকেন রিং নেটওয়ার্ক। এখানে ডাটা পরিবাহিত হয় বলয়ে। ফিডি (FDDI) নেটওয়ার্ক হলো লজিক্যাল রিং টপোলজির আরকে উদাহরণ।
ফিজিক্যাল স্টার টপোলজিতেও লজিক্যাল রিং টপোলজি হতে পারে যদি হাবের স্থানে থাকে মাউ (MAU) বা মাল্টিস্টেশন অ্যাক্সেস ইউনিট। এই মাউতে কম্পিউটারগুলি যুক্ত থাকে স্টার টপোলজির মতো করেই।

সারকথা


নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কীভাবে যুক্ত আছে সেই লেআউটকে বলা হয় টপোলজি। এটি দু'ধরনের হতে পারে - ফিজিক্যাল ও লজিক্যাল। ফিজিক্যাল টপোলজিগুলো হলো - বাস, স্টার, রিং, মেশ এবং হাইব্রিড। আর লজিক্যাল টপোলজি হতে পারে দু'ধরনের - লজিক্যাল বাস ও লজিক্যাল রিং। এসব টপোলজির প্রতিটিরই আছে সুবিধা-অসুবিধা। আপনার নেটওয়ার্কের জন্য সুবিধাজনক একটি টপোলজি বাছাইয়ের উপর নির্ভর করবে এর ব্যয়, গতি এবং আরো কিছু বৈশিষ্ট্য

Comments